আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত শিশুদের চিকিৎসা করা থেরাপিস্ট সাবরিন আবু রহমান বলেন, মানসিক আঘাতের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রায়ই মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, হাড়ের ব্যথা, চুল পড়া, ভিটিলিগো ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে।
জাতিসঙ্ঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের মতে, গাজায় ৬৪ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙে পড়েছে।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক এডুয়ার্ড বেগবেডার বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ লাখ শিশু বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানে বেঁচে থাকার ভয়াবহতা সহ্য করছে। তাদের মধ্যে ভয়, ক্ষতি ও শোকের ক্ষত থেকে যাচ্ছে।’
১৫ বছর বয়সী আবেদ আল-আজিজ আবু হাবিশাল এমন দৃশ্য দেখেছে, যা কোনো কিশোর-কিশোরীর কখনো দেখা উচিত নয়। আবেদ বলেছে, ‘আমরা গাজা শহরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছিলাম যখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী আক্রমণ করে। তারা আমাকে একটি ট্যাঙ্কের কাছে টেনে নিয়ে যায়, এবং একজন সৈন্য তার বন্দুক আমার মাথায় তাক করে।’
তার বাড়ির কাছে যে ‘গণহত্যা’র দৃশ্য সে দেখেছিল, তা হয়তো কখনোই সে ভুলতে পারবে না। সে বলেছে, বোমা বিস্ফোরণে সে মানুষের দেহের খণ্ডাংশ উড়ে যেতে দেখেছে। এমনকি নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ানোর সময় লাশের ওপর পা দিয়েছে, মাথাবিহীন নারীর লাশ দেখেছে।
মানসিক আঘাতের ফলে তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া এবং সম্প্রতি তার কিডনি বিকল হয়ে গেছে।
একইভাবে, আট বছর বয়সী লানা আল-শরীফের ওপর মানসিক আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। খান ইউনিসের বাস্তুচ্যুত শিবিরের অন্যান্য বাসিন্দারা তাকে ‘বৃদ্ধ শিশু’ বলে ডাকে, কারণ তার একসময়ের কালো, ঘন চুল এখনই সাদা হতে শুরু করেছে।
তার বাবা খলিল আল-শরীফ বলেন, ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ার পরও লানা বেঁচে যায়। ক্ষেপণাস্ত্রের ধোঁয়া ও রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসায় সে ভিটিলিগো নামে একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগ আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার ত্বক, চুল ও চোখের রঙ নষ্ট হয়ে গেছে।
তার বাবা বলেন, ‘অনেক ডাক্তার তার চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। প্রতিবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনলেই সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’
উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজাজুড়ে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৪৬ শিশু ও ২০ জন নারীসহ ১০৪ জন নিহত হয়েছে।
Your Comment